শ্রেয়া ঘোষাল : সুরে সুরে ইতিহাসে
ভারতের সংগীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষালের গানের তালিকা তার গায়কীর মতোই বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত৷ তার জীবনের কিছু ঝলক এই ছবিঘরে...
জন্ম ও শুরু
১৯৮৪ সালের ১২ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে জন্মান শ্রেয়া ঘোষাল, কিন্তু তার বেড়ে ওঠা রাজস্থানের রাওযাতভাটা নামের একটি ছোট শহরে৷ মাত্র চার বছর বয়সে গান শিখতে শুরু করে নয় বছর বয়সে সর্বভারতীয় পর্যায়ের একটি সংগীত প্রতিযোগিতা জেতেন৷ তবে সারা দেশে তার খ্যাতির শুরু ২০০০ সালে জিটিভির বিখ্যাত অনুষ্ঠান সারেগামাপা-তে অংশগ্রহণের সময়ে৷
গানের ঘরানা
প্রথমে মায়ের সাথে বাংলা গান শেখা শুরু করে পরে শ্রেয়া শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন৷ প্রথমে কল্যাণজী ভাই ও মুম্বাইতে যাবার পর মুক্তা ভিড়ের কাছে গান শেখেন তিনি৷ কিন্তু চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গানে তিনি সবধরনের গান গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন৷ বিশেষ করে প্রশংসিত হয়েছেন তার কন্ঠের ব্যাপ্তি ও একাধিক ভাষায় দখলের জন্য৷
পেশাদার সংগীত জীবনের শুরুতেই বড় সাফল্য
সারেগামাপা-য় অংশগ্রহণের সময়েই চিত্রনির্মাতা সঞ্জয় লীলা ভনশালীর নজরে আসেন শ্রেয়া৷ ২০০২ সালে তার পরিচালনায় ‘দেবদাস’ ছবিতে গান গেয়ে আত্মপ্রকাশের সাথে সাথেই জিতে নেন বর্ষসেরা নারী কন্ঠশিল্পী হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার৷ সেই ছবিতে মোট পাঁচটি গান গেয়েছিলেন তিনি৷ ছবিটির সংগীত পরিচালক ছিলেন ইসমাইল দরবার৷
‘শ্রেয়া ঘোষাল দিবস’
শাস্ত্রীয় ঘরানায় গান গেয়ে শুরু করলেও শ্রেয়া ঘোষাল সেখানে থেমে থাকেননি৷ ‘জিসম’, ‘জব উই মেট’, ‘ভুল ভুলাইয়া’ বা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো ছবিতে নানা স্বাদের গান গেয়েছেন৷ তার খ্যাতি ভারতের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ অ্যামেরিকার ওহায়োতে ২০১০ সালে ২৬ জুনকে ঘোষণা করা হয় ‘শ্রেয়া ঘোষাল দিবস’ হিসাবে৷ দিল্লির মাদাম তুসোর মোমের মিউজিয়ামে প্রথম কন্ঠশিল্পী হিসাবে শ্রেয়ার মোমের মূর্তি রাখা হয় ২০১৭ সালে৷
পুরস্কারের জোয়ার
২০২৩ সালে তামিল ছবি ‘ইরাভিন নিড়ল’ ছবিতে তার গাওয়া ‘মায়াভা চায়াভা’ গানের জন্য পঞ্চমবারের মতো জাতীয় পুরস্কার পেলেন শ্রেয়া৷ ভারতের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কে এস চিত্রা সব চেয়ে বেশি ছয় বার এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷ এছাড়াও শ্রেয়া তার সংগীত জীবনে সব ভাষা মিলিয়ে সতেরোবার জিতেছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার৷ ২০২৩ সালে গ্র্যামি পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত হয় তার অ্যালবাম ‘শুরুয়াৎ’৷
বিশ্বজুড়ে সুনাম
গোটা সংগীত জীবনে ২০টি ভাষায় প্রায় আড়াই হাজার গান করেছেন তিনি৷ এর মধ্যে প্রায় এক হাজার একশটিরও বেশি গান হিন্দি ভাষায়৷ হিন্দি ছাড়াও বাংলা, তামিল, তেলুগু, মালায়ালাম, মারাঠি, অসমীয়া, ওড়িয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি ভাষার ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি৷ যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমনসেও সম্মানিত হয়েছেন তিনি৷
পরিবার ও সামাজিক ভূমিকা
২০১৫ সালে বাল্যবন্ধু শিলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন শ্রেয়া৷ তাদের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে৷ ফেসবুকে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে শ্রেয়া৷ স্পটিফাই ও অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মেও গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারতীয় নারী কন্ঠশিল্পীদের তালিকায় শীর্ষে শ্রেয়া৷