1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এখন টাকা খরচ না করলে কেউ এমপি হতে পারে না'

সমীর কুমার দে
২২ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ের উৎস কী? তাদের প্রকৃত ‘আয়' এবং ব্যয় কি সঙ্গতিপূর্ণ? নির্বাচনের খরচই বা আসে কোত্থেকে? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়েই কথা বলেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

https://p.dw.com/p/4e2OB
সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা
‘বড় রাজনৈতিক দলের তো লাখ লাখ সদস্য থাকে। তাদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা নেয়, সেটা নির্বাচন কমিশন দেখে না’ - বলেন নুরুল হুদাছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে : রাজনৈতিক দলগুলো যে অর্থের হিসাব জমা দেয়, সেখানে তারা অর্থের উৎস হিসেবে কী দেখায়?

কে এম নুরুল হুদা : অর্থের উৎস হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো সদস্যদের চাঁদা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি দেখায়। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি যদি তাদের অর্থ দেয়, সেটাও দেখায়। এখানে যিনি টাকা দিচ্ছেন তার অর্থের উৎস দেখাতে হবে। এগুলোই তারা দেখায়।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বছরে যে হিসাব দেয় সেটি কি স্বচ্ছ?

তারা যে হিসাব জমা দেয়, সেটা আর্থিক নিয়ম অনুযায়ী দেয়। কতগুলো মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে, কত জন সদস্যের কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা পেয়েছে, সেগুলো তারা উল্লেখ করে। এটার মধ্যে আসলে কোনো ভুল থাকে না।

আয়-ব্যয়ের হিসাব আপনারা কখনো যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন?

না, এটা কখনো দেখা হয় না। বড় রাজনৈতিক দলের তো লাখ লাখ সদস্য থাকে। তাদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা নেয়, সেটা নির্বাচন কমিশন দেখে না। এই প্রক্রিয়াটি বৈধ। সদস্যদের বাইরেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে যারা সমৃদ্ধশালী আছে, তারাও চাঁদা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এটা খোঁজ খবর নেওয়া হয় না।

কমিশনের সীমাবদ্ধতা লোকবল নেই: হুদা

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী পরপর তিন বছর কোনো দল হিসাব না দিলে নিবন্ধন বাতিলের বিধান আছে? সেটির কোনো প্রয়োগ এখনো পর্যন্ত হয়েছে?

তারা হিসাব দিয়ে দেয়। কেউ দিতে না পারলে সময় নেয়। অনেকে ১৫ দিন, অনেকে এক মাস সময় নেয়। তার মধ্যেই দিয়ে দেয়। কেউ দিতে পারলে তাদের শোকজ করা হয়। এমনটা কখনো ঘটে না। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য তারা আসলে হিসাব দিয়ে দেয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর হিসাবে গরমিল কখনো ইসির কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে-এমন নজির নেই? তার মানে ইসির কার্যক্রম কি হিসাব জমা নেওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ?

কোনো রাজনৈতিক দলের হিসাবের ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে সেটা তদন্ত করা হয়। এমন ভুল তারা করে না। অভিজ্ঞ ও দক্ষদের দিয়েই হিসাবটা তারা জমা দেয়। ভুল সাধারণত তারা করে না।

ভারতে নির্বাচনি বন্ড নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশেও সেটা সম্ভব?

বিভিন্ন ধরনের বন্ড আছে। কিন্তু ভারতে কোন ধরনের বন্ড নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটা আমি আসলে জানি না।

অ্যামেরিকায় তো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো অর্থ তোলে। সেখানে সমস্যা হচ্ছে না। বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব?

না। বাংলাদেশে এটা করা হলে ঠিক হবে না। এখানে লিমিটেশন আছে। অ্যামেরিকা বা ইংল্যান্ডে যেটা করা হয়, বাংলাদেশে সেটা করা যাবে না। ইংল্যান্ডে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করতে পারে। অ্যামেরিকায় এবারও নির্বাচনে তাদের অনেক টাকা বাজেট আছে। গত নির্বাচনের সময় তারা ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এই টাকাগুলো তারা চাঁদা ও অনুদান হিসেবে আনে। তবে তাদের হিসাবটা দিতে হয়। প্রার্থীরা টাকা নিয়ে নিজের পকেটে রাখলো কিনা বা নয়ছয় করলো কিনা সেটা দেখা হয়। এ বছরের নির্বাচনে তারা ৭ কোটি ইউএস ডলার সরকারিভাবে খরচ করতে পারবে। তবে একটি দল কত খরচ করবে সেটা তাদের সংবিধানে নেই। তবে অ্যামেরিকায় ফেডারেল ইলেকট্রোরাল কমিশন আছে। তারা খুবই ক্ষমতাধর। তারা দেখে থাকে কোথাও ভুলভ্রান্তি হচ্ছে না। ধরা পড়লে তারা শাস্তিও দেয়। একটা উদাহরণ দেই৷ ফ্লোরিডায় একবার একজন প্রার্থী কারসাজি করেছিল। তখন সে ধরা পড়ে। এতে তার জেল হয়েছে, জরিমানাও হয়েছে।

রাজনৈতিক দলের হিসাব তো দুদক বা এনবিআরে দিয়েও পরীক্ষা করানো যায়?

যায়- যদি সন্দেহ হয়। এখানে দুটো জিনিস। এই হিসাবে তারা সাধারণত ভুল করে না। কারণ, তারা জানে কোন কোন জায়গা থেকে টাকা এসেছে। নির্বাচনের সময় ৩০০ আসনের জন্য তারা খরচ করতে পারে। এই খরচটাও তারা দেখায়। এটা আমার মনে হয় ঠিক আছে।

নির্বাচনে একজন প্রার্থীর যে খরচ করার কথা, তারা তো অনেক বেশি খরচ করে। সেটা কেন নির্বাচন কমিশন দেখে না?

এটা দেখার সুযোগ আছে। কিন্তু দলগতভাবে যেটা দেয় সেটা ঠিক আছে। কিন্তু একজন প্রার্থীর খরচের ক্ষেত্রে প্রচুর অসঙ্গতি হয়, এটা স্বীকার করতেই হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা হলো এই যে, তাদের ওই ধরনের লোকবল নেই। অ্যামেরিকার কথা যে বললেন, সেখানে ফেডারেল ইলেকট্রোরাল কমিশন যে আছে, সেটা ১৯৭৪ সালে গঠন করা হয়েছে। এরা কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় থাকে না। আমাদের দেশে যেমন নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নির্বাচন কমিশন থাকে, ওখানে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্টেটের। ওই কমিশনটা মূলত আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। একজন প্রার্থীর খরচের হিসাব তাদের কাছে দিতে হয়। আমাদের দেশে আলাদাভাবে কোনো অফিস নেই। নির্বাচন কমিশনের যে কাজ তাতে তারা এগুলো দেখার সুযোগ পায় না।

অর্থনৈতিক দুর্নীতির কারণে রাজনৈতি দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, বিষয়টা কি আসলে এমন?

এমন তো বটেই। রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণটা হলো, যারা এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হয়, তারা প্রচুর টাকা খরচ করে। এখন সংস্কৃতি হয়ে গেছে, টাকা খরচ না করলে কেউ এমপি হতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে নানা ধরনের ফ্যাক্টর এর মধ্যে ঢুকে গেছে। এমপি হওয়ার জন্য তারা যত টাকা ইনভেস্ট করে, ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারা নানা মাধ্যম থেকে এটা উসুল করে নেয়। এটা তো একটা দুর্নীতি বটেই। দুর্নীতির জন্য আলাদা একটা সেল থাকা দরকার- নির্বাচন কমিশনের যেটা নেই।